যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

বিজ্ঞানী আল ফারাবি একটি চেতনা ও একটি বিপ্লব

আল ফারাবি একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি চেতনা ও একটি বিপ্লব। এই পৃথিবীতে যত ক্ষণজন্মা মুসলিম মনীষীর জন্ম হয়েছে, বা যাদের পদভারে এই পৃথিবী ধন্য হয়েছে, যারা যুগের পর যুগ এই পৃথিবীতে যুগান্তকারী অবদান রেখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন- মুসলিম বিজ্ঞানী আল ফারাবি তাদের অন্যতম। এই পৃথিবীতে তাঁর প্রথম পদচারণার তারিখটি সঠিকভাবে জানা যায়নি। যেহেতু এই বিষয়টি সেই সময়ের মানুষের কাছে কোনো প্রকার গুরুত্ব বহন করত না। তবে ঐতিহাসিকদের ধারণা মতে যতটুকু জানা যায়- ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ফারাব নামক শহরের নিকটবর্তী আল ওয়াসিজ নামক গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।

খ্যাতিমান ব্যাক্তিদের জীবনী উদঘাটন করলে দেখা যায় যে, তাঁরা তাদের জন্মস্থান, জন্মশহর কিংবা দেশের নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। ফারাবির ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। ফারাব নামক শহরের নামানুসারেই পরবর্তীতে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। জ্ঞানের তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্থ ফারাবির মধ্যে ছোটকাল থেকেই জ্ঞান আহরণের স্পৃহা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অজানাকে জানার, অজেয়কে জয় করার ক্ষুধা ছিল তার অবর্ণনীয়। তিনি জ্ঞান - বিজ্ঞানে পা-িত্য অর্জনের জন্য ছুটে চলছেন দেশ হতে দেশান্তরে। এর পিছনে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন গোটা জীবন। বিজ্ঞানী আল ফারাবি খোদাভীরু একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ও সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা। ফারাবির পূর্বপুরুষগণ ছিলেন পারস্যের অধিবাসী।

ইসলামগ্রহণ করে পারস্য ত্যাগ করে তুর্কিস্থানে এসে স্থায়ী পাড়ি জমান। এই বিজ্ঞানীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ফারাবায়। সেখানে কিছু সময় শিক্ষা লাভ করে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে চলে যান বুখারায়। এরপর গমন করেন বাগদাদে। সেখানে দীর্ঘ প্রায় ৪০ বৎসর অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন তিনি। বেশ কিছু ভাষায় পা-িত্য অর্জন করেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে আল ফারাবির প্রতিভা বিস্তৃত হয়নি। এতকিছুর পরও তিনি জ্ঞানের তৃষ্ণা থেকে নিবৃত হননি। দার্শনিক হিসেবে ফারাবির সুখ্যাতিও ছিল সর্বত্র। একজন গবেষক হিসেবেও পৃথিবীবাসীর কাছে তাঁর কদর কম ছিলনা। তাঁর গবেষণার মৌলিক বিষয়-বস্তু ছিল বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখা নিয়ে। পদার্থ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র,সমাজ বিজ্ঞান, গণিত শাস্ত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো।বিজ্ঞান ও দর্শনে তাঁর অবদান ছিল সর্বাধিক। পদার্থ বিজ্ঞানে ফারাবি শূন্যতার অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। একজন দার্শনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন নিওপ্লেটোনিস্টদের পর্যায়ে বিবেচিত।

একজন দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক হিসেবে তিনি আরোহন করেছিলেন সবার শীর্ষে। এই বিজ্ঞানী মুসলিম মহামনীষী আল ফারাবি রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তি শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক বলেও অনেকে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁর এসকল অমূল্য গ্রন্থের অধিকাংশই মুসলিম জাতির সামনে নেই। ফারাবির মতো এমন অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী দার্শনিক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী এই পৃথিবীতে পদার্পণ করেছেন। আর পৃথিবীর মানুষের জন্য রেখে গেছেন অনেক কিছুই। তাঁর মতো এমন অসংখ্য মুসলিম মহাবিজ্ঞানীদের কর্মফল সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নই।

আমরা আজ ছুটে বেড়াচ্ছি পাশ্চাত্য সভ্যতার লোকজন কে কি করলো সে বিষয় নিয়ে। আর তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছি। আর তাই বলা হয় মুসলিম জাতি আজ তাদের গৌরবোজ্জল ইতিহাস ভুলে যাচ্ছে। সুতরাং মুসলিম জাতি যদি তাদের হারানো গৌরবকে ফিরে পেতে চায় তাহলে মানুষের তৈরি করা তন্ত্র -মন্ত্রের দিকে না ছুটে আল কুরআনের দিকে ছুটে আসতে হবে। মুসলমানদের গৌরবোজ্জল ইতিহাস অধ্যয়ন করতে হবে। তাহলে মুসলমানদের মধ্যে আবারো তৈরি হবে বিজ্ঞানি আল ফারাবির মতো অনেক মনীষী।