অজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর
No icon

মুসলিম সমাজে কবি ও লেখকদের ভূমিকা

পবিত্র কোরআনে কবিদের নিয়ে সুরা আশ-শুআরা নামের একটি পূর্ণ সুরা আছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আর কবিদের তারাই অনুসরণ করে, যারা বিভ্রান্ত। তুমি কি দেখনি যে তারা প্রত্যেকে ময়দানে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।’ (সুরা আশ-শুআরা, আয়াত : ২২৪-২২৫)

এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মুসলিমের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যায় যে ইসলামে কাব্য লেখা ভালো চোখে দেখা হয় না। আসলে এটা জাহেলি যুগের কবিদের নিয়ে বলা হয়েছিল। ইসলামের আগমনের আগে বেশির ভাগ কবির অবস্থা প্রকৃত অর্থে কোরআনে বর্ণিত অবস্থার অনুরূপই ছিল। বেশির ভাগ কবির কবিতা ছিল অশ্লীলতা ও নগ্নতায় ভরপুর। কবিতার মাধ্যমে নারী দেহের বর্ণনা, নারী-পুরুষের যৌনতার চিত্রায়ণ করাই ছিল কবিদের মুখ্য কাজ। আইয়্যামে জাহেলিয়াতে আরবের বিখ্যাত কবি ইমরুল কায়েসের কবিতা অশ্লীলতায় ভরপুর ছিল। তিনি প্রচণ্ড উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন। সঙ্গীদের সঙ্গে মরুভূমিতে ভবঘুরে জীবন যাপন করতেন। মেতে থাকতেন শিকার, মদ্যপান, জুয়া ও নারী নিয়ে। বিভিন্ন মজলিসে বা ময়দানে ইসলামবিরোধী কবিরা ইসলামবিদ্বেষী কবিতা পাঠ করে ইসলামবিদ্বেষীদের মজা দিত আর ইসলামপন্থীদের কষ্ট দিত।

কবিদের এই বিদ্বেষপূর্ণ আচরণে মহানবী (সা.) খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। তিনি ওই সময় এক মজলিসে বলেন, কে আছে এমন যে আমাকে শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, মুখ দিয়ে যুদ্ধ করতে সাহায্য করবে? তখন সাহাবি কবি হাসসান বিন সাবিত (রা.) সামনে এসে দাঁড়ান। তিনি রাসুল (সা.) ও ইসলামের প্রতিরক্ষায় কবিতা লেখার জন্য সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁকে ইসলামের প্রথম ধর্মীয় কবি হিসেবেও স্বীকার করা হয়। 

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ‘হাসসান বিন সাবিত দুই হাজারেরও বেশি ব্যঙ্গ ও উপাখ্যান লিখেছেন। তিনি তিন থেকে ২০ লাইনের প্রায় এক হাজার কবিতা লিখেছেন বলে জানা যায়। আবু সুফিয়ান, ইবনুল-জিবারা, আমর বিন আল-আশ, হাতেম বিন হিশাম ও আবু জাহলকে ব্যঙ্গ করে এই কবিতাগুলো রচিত হয়েছিল। তিনি তাদের বানর, ছাগল, উটপাখি ও শেয়ালের সঙ্গে তুলনা করে তাদের তুচ্ছ করেছেন।

লাবিদ ও হাসসান বিন সাবিতের মতো ইসলামের যুগে অনেক জনপ্রিয় সাহাবি ছিলেন স্বভাবকবি। আলী (রা.), আয়েশা (রা.) ও ফাতেমা (রা.) ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এখনো আলী (রা.)-এর কবিতা এখনকার সময়ের তরুণ কবিদের কাছে অনুপ্রেরণা ও আগ্রহের অনুষঙ্গ।

মহানবী (সা.)-এর যুগে মুসলিম কবিরা কবিতার মাধ্যমে যুদ্ধের ময়দানে যোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতেন, প্রাণপণ লড়াই করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতেন। স্বয়ং আলী (রা.) কবিতার মাধ্যমে মল্লযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীদের আহ্বান করতেন। অনেক সময় অন্য যোদ্ধারাও বিভিন্ন কবিরও বা নিজেদের সৃষ্ট কবিতা আওড়াতেন ।

পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন দেশে মুসলিম কবি ও লেখকরা ইসলামের শৌর্যবীর্য তুলে ধরেছেন তাঁদের কবিতার মাধ্যমে। অনেক সময় মুসলিমদের নানা ধরনের ভুল সংশোধনের জন্য কবিতা বা লেখনীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁদের মধ্যে ইরানের কবি জালালুদ্দিন রুমি, শেখ সাদি, ফেরদৌসি এবং পাকিস্তানি কবি আল্লামা ইকবাল অন্যতম। লেবানিজ আমেরিকান কবি, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক কাহলিল (খলিল) জীবরানও এ ক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য।

আমাদের বাংলা ভাষায় কায়কোবাদ, ফররুখ আহমেদ, কাজী নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা ও আল মাহমুদ অন্যতম। সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল রচনা করেছেন বহু ইসলামী সংগীত। বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলিম কবি ও লেখকদেরও আলী (রা.) ও হাসসান বিন সাবিতের মতো দ্বিধাহীন চিত্তে ইসলামের জন্য উঠে দাঁড়ানো উচিত। হাতে কলম বা কি-বোর্ড তুলে নেওয়া উচিত—ইসলাম ও মানবতার জন্য কথা বলতে।