কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতরবৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতরপবিত্র কাবা শরীফ থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো তারাবির নামাজের কাতার
No icon

বিশ্বনবী সা:-এর সাদাসিধে জীবনযাপন

অনাড়ম্বর জীবনযাপন বলতে বোঝায় সাধারণ, সাদাসিধে ও জাঁকজমকহীন জীবনযাপন করা। ইসলাম অনাড়ম্বর জীবনযাপন করাকে পছন্দ করে, বিলাসবহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনকে অপছন্দ করে।

সম্পদের লোভ : জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করতে হলে প্রয়োজন অঢেল ধনসম্পদ। জীবন ধারণের প্রকৃত প্রয়োজন পূরণ হওয়ার পরও উত্তরোত্তর অর্থ সঞ্চয়ের পেছনে দৌড়ানোকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। আর মৌলিক প্রয়োজন পূরণের মতো অর্থসম্পদের মালিক হওয়াকে যথেষ্ট মনে করে। কেননা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ ব্যক্তিকে অহঙ্কারী করে তোলে এবং দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তাকাছুর তথা সম্পদের আধিক্যের মোহ তোমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। যেই পর্যন্ত না তোমরা কবরে পৌঁছ।’

(সূরা তাকাছুর : ১-২) মহানবী সা: বলেন, ‘সম্পদের লোভ ও অভিজাত হওয়ার লালসা একজন ব্যক্তির দ্বীনদারির জন্য এত বেশি ক্ষতিকর যে, বকরির পালে পতিত দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘও বকরির পালের এত বেশি ক্ষতি করতে পারে না।’ (জামে তিরমিজি) রাসূলুল্লøাহ সা: আরো বলেন, ‘আদম সন্তানের এই কয়েকটি বস্তু ছাড়া অতিরিক্ত কিছুর প্রয়োজন নেই। বসবাসের জন্য একটি ঘর, লজ্জা নিবারণের জন্য কিছু কাপড়, আহারের জন্য কিছু রুটি ও পানি।’ (জামে তিরমিজি) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে- প্রশস্ত বসতঘর, নেক প্রতিবেশী ও আরামপ্রদ বাহন।’ (মুসনাদ আহমাদ) মহানবী সা: আরো বলেন, ‘ওই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, প্রয়োজন অনুযায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তার ওপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দান করেছেন।’ (মুসলিম)

বিলাসী জীবন : মহানবী সা: আরো বলেন, ‘বিলাসিতা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা আল্লাহর বান্দারা বিলাসী হয় না।’ (মুসনাদ আহমদ, সুনানে আল বায়হাকি)

মহানবী সা: আরো বলেন, ‘তোমরা কি শুনছ না? তোমরা কি শুনছ না? অবশ্যই অনাড়ম্বর জীবন ঈমানের পরিচায়ক।’ (সুনানে আবু দাউদ) রাসূলুল্লাহ সা: তার প্রিয় সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা:-কে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘তুমি দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা একজন পথচারীর মতো চলো।’ (বুখারি) মহানবী আরো বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করছি না; বরং ভয় করছি যে, তোমাদের সামনে পার্থিব প্রাচুর্য প্রসারিত করা হবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য করা হয়েছিল। অতঃপর তোমরা পার্থিব প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতায় লেগে যাবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা লেগেছিল এবং এটি তোমাদেরকে ধ্বংস করবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

বিশ্বনবী সা:-এর জীবনযাপন : মহানবী সা: অনাড়ম্বর, সাদাসিধে ও জাঁকজমকহীন জীবনযাপন করা পছন্দ করতেন। রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করে তিনি বিরল নজির স্থাপন করেছেন। তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন এবং বসবাস সাধারণ ছোট একটি গৃহে। গৃহে ছিল না কোনো দামি আসবাবপত্র। শয়ন করতেন চাটাইয়ে, যার ফলে দেহ মোবারকে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যেত। ইবনে মাসউদ রা: একদা এ দাগ দেখে কেঁদে দিলেন এবং বললেন, দুনিয়ার রাজা-বাদশাহরা কত সুখ-শান্তিতে জীবনযাপন করে, আর আপনার এ অবস্থা। রাসূল সা: বলেন, ‘আমাদের সুখ-শান্তি পরকালে আর তাদের সুখ-শান্তি ইহকালে।’

( তিরমিজি) তিনি অতিভোজ পছন্দ করতেন না। হজরত নোমান ইবনে বশির রা: বলেন, আমি তোমাদের নবী সা:-কে দেখতে পেয়েছি, তিনি নিকৃষ্ট মানের খেজুরও পেটভরে খেতে পাননি। ( তিরমিজি) হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর শয্যা ছিল এমন যে, তাতে খেজুরের ছাল ভরা ছিল (প্রাগুক্ত)। মহানবী সা: আহারের সময় তিনটি অঙ্গুলি ব্যবহার করতেন (প্রাগুক্ত)। হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূল সা:-এর ওফাত পর্যন্ত তার পরিবারের লোকজন একাধারে দুুই দিন যবের রুটি পেট ভরে খেতে পাননি (প্রাগুক্ত)। মহানবী সা:-এর জমা ছিল সাধারণ মানের। তিনি সাদা জামা পছন্দ করতেন। হজরত আয়েশা রা: বলেন, কোনো কোনো সময় কালো রঙের পশমি চাদর পরতেন। তিনি আরো বলেন, রাসূল সা: খাবার সঞ্চয় করে রাখতেন না এবং তাঁর পরিধেয় জিনিস যেমন- জামা, চাদর, লুঙ্গি, জুতা একাধিক ছিল না। ( তিরমিজি)