যেসব জায়গায় জুমার নামাজ শুদ্ধ হয় নাঅজুর সময় কথা বলা কি নাজায়েজ?কোরআনের চর্চা অব্যাহত রাখা আবশ্যকশাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতসৌদিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর
No icon

ফরজ নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে যে গুনাহ

ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে আল্লাহর জিম্মাদারি থেকে বেরিয়ে যায়। সব কিছু হারিয়ে ফেলে। মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি বা রক্ষণাবেক্ষণ তুলে নেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।(মুসনাদ আহমাদ ৫/২৩৮)

সব নবিদের যুগেই নামাজের বিধান ছিল। তবে পদ্ধতিগতভাবে পার্থক্য ছিল। কিন্তু তাদের পরবর্তীতে লোকেরা নামাজের ব্যাপারে অবহেলা শুরু করে। অথচ ফরজ নামাজ আদায় না করা ভয়াবহ গুনাহের কাজ। আর এর কঠিন পরিণতি হলো- চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

নামাজ না পড়ার ক্ষতি

নামাজ না পড়লে ইহকালেও বহু ক্ষতি সাধিত হয়। হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করলো- তার সব আমল বরবাদ হয়ে গেল। (বুখারি ৫৫৩, ৫৯৪)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে গেল তার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদের যেন বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। (বুখারি ৫৫২)

আল্লাহ তাআলা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে কিংবা যানবাহনে থাকলে, তার নামাজেরও সুরত এবং পদ্ধতি রয়েছে।

বেনামাজিদের জাহান্নাম

আল্লাহ তাআলা বেনামাজিদের ব্যাপারে বলেন-

فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا  اِلَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَاُولٰٓئِکَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا

নবী ও হেদায়েতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা গাই নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৫৯)

কোরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে এসেছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে- কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদের খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে (কেয়ামত) অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল। (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৩৮-৪৭)

নামাজ ছেড়ে দেওয়ার দৃষ্টান্ত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কুফরি করলো। (কাফেরের মতো কাজ করলো)। (মুসলিম ৮২)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল। (তিরমিজি ২৬২১)

মনে রাখতে হবে

নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি বাহ্যিক নিদর্শন। ঈমানের পর ইসলামের সবচেয়ে বড় হুকুম ও ইবাদত। আর নামাজ ছেড়ে দিলে মুসলিমের থেকে ইসলামের বড় কিছু ছুটে যায়। তাই হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের। (বায়হাকি ১৫৫৯, ৬২৯১)

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বেনামাজির ব্যাপারে বলতেন, যে নামাজ পড়ে না সে কাফের। (বায়হাকি,৬২৯১)

হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়। (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১)

তারা প্রত্যেকে নামাজ না পড়ার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উল্লেখ করেছেন। তারা বলতে চেয়েছেন যে, নামাজ পরিত্যাগ করা কাফেরদের কাজ। যে মুসলমান নামাজ পড়ল না সে যেন কাফেরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ করল।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজ থেকে বিরত থাকার মানসিকতা দূর করে দিন। আমিন।