মু’মিনজীবনে ঈমানের পর আবশ্যকীয় বিধান হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পুরুষদের জন্য পদ্ধতিগত বিধান হলো জামাতে আদায় করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ তথা জামাতে সালাত আদায় করো। (সূরা বাকারা-৪৩)
ইবনে মাসুদ রা: বলেন, ‘নিঃসন্দেহে রাসূল সা: আমাদের হেদায়েতের তরিকাগুলো শিখিয়েছেন। হেদায়েতের এই তরিকাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ তরিকা হলো, যেখানে আজান হয় সেখানে সালাত আদায় করা।’ (মুসলিম-১৪৮৫)
ইসলাম যেমনিভাবে জামাতে সালাত আদায়ের খুব গুরুত্ব দিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে তার অনেক ফায়দাও বর্ণনা করেছে। সেগুলো হলো-
১. একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে জামাতে সালাত আদায়ে বেশি নেকি। রাসূল সা: বলেছেন, ‘একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে জামাতে সালাত আদায়ে ২৭ গুণ বেশি নেকি।’ (মুসলিম-১৪৭৭)
২. জামাতে সালাত আদায়ে জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আনাস ইবনে মালিক রা: বলেন, রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন তাকবিরে তাহরিমার সাথে জামাতে সালাত আদায় করবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে দু’টি পুরস্কার দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি। দুই. মুনাফিকের তালিকা থেকে মুক্তি। (সুনানে তিরমিজি-২৪১)
৩. জামাতে সালাত আদায় করলে পেছনের সব গুনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ থাকে। রাসূল সা: বলেন, ‘যখন ইমাম গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লিন বলে তখন তোমরা আমিন বলো। কারণ যার আমিন বলা ফেরেশতাদের আমিন বলার সাথে মিলে যাবে তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি-৭৯৬, মুসলিম-৪৯৯)
রাসূল সা: আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতের জন্য সুন্দরভাবে ওজু করবে, অতঃপর ফরজ সালাতের জন্যে হেঁটে হেঁটে মসজিদে গিয়ে বা জামাতের সাথে সালাত আদায় করবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম-২৩২, সুনানে নাসায়ি-৮৫৫)
৪. আসর ও ফজরের সালাত জামাতে আদায় করলে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়। রাসূল সা: বলেন, ‘রাত-দিনের পালাবদলে তোমাদের মধ্যে ফেরেশতাদেরও পালাবদল হয়। তারা আসর ও ফজর সালাতে একত্রিত হয়। এরপর যেসব ফেরেশতা তোমাদের মধ্যে রাতে অবস্থান করেছিল তারা উপরে উঠে যায়। তখন তাদের রব তাদের জিজ্ঞেস করেন অথচ তিনি তাদের থেকে অধিক জানেন। তোমরা আমার বান্দাদের কিভাবে ছেড়ে এসেছ? তারা বলেন, তাদেরকে সালাতরত অবস্থায় পেয়েছি এবং সালাতরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। অতএব আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা-৩২২, সহিহ ইবনে হিব্বান-২০৬১)
৫. ইশার সালাত জামাতে আদায় করলে অর্ধরাত নামাজ আদায়ের নেকি পাওয়া যায়। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধরাত নফল সালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করল সে যেন পুরো রাতই নফল সালাত আদায় করল।’ (মুসলিম-৬৬৫)
৬. জামাতে সালাত আদায় করলে সারা দিন
আল্লাহর হিফাজতে থাকা যায়। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর হিফাজতে থাকে। আল্লাহর হিফাজতে থাকা ব্যক্তিকে যে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (মুসলিম-৬৫৭)
৭. জামাতে সালাত আদায়ের ইচ্ছায় ঘর থেকে বের হয়ে জামাত না পেলেও জামাতের পূর্ণ নেকি পাওয়া যায়। রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করে মসজিদে এসে দেখল লোকেরা সালাত আদায় করে ফেলেছে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে জামাতে উপস্থিত হয়ে সালাত আদায়কারীর সমপরিমাণ নেকি দেবেন এবং তাদের নেকি থেকে কোনো কিছু কমতি করা হবে না।’ (আবু দাউদ-৫৬৪, সুনানে নাসায়ি-৮৫৫)
৮. জামাতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে সালাত পূর্ণতা পায়। রাসূল সা: বলেন, ‘ইমাম হলো জামানতদার আর মুয়াজ্জিন হলো আমানতদার। তাই হে আল্লাহ! আপনি ইমামদেরকে সঠিকপথে রাখুন আর মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা করুন।’ (আবু দাউদ-৫১৮, সুনানে তিরমিজি-২৯৮)
হাদিসবিশারদরা বলেন, ‘ইমাম জামানতদার’ এ কথার অর্থ হলো- ইমাম সব উপস্থিত মুসল্লির সালাত পূর্ণতার দায়িত্বশীল।
৯. জামাতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হিফাজতে থাকা যায়। রাসূল সা: বলেন ‘কোনো গ্রাম বা মহল্লায় যদি তিনজন ব্যক্তি থাকে এবং সেখানে সালাত (জামাতে) আদায় করা না হয় তবে শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং তোমরা দলবদ্ধ হয়ে থাকো। কারণ বাঘ দল থেকে দূরে অবস্থানকারী ভেড়ার ওপর আক্রমণ করে তাকে খেয়ে ফেলে।’(আবু দাউদ-৫৪৭)
১০. জামাতে সালাত আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে খুশি করা যায়। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে- রাসূল সা: বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জামাতে নামাজ পড়া দেখে আনন্দবোধ করেন।’ (সহিহ জামে-১৮২০)।